ইস্তেগফার কি?
ইস্তেগফার কিভাবে করতে হয়?
🔲ইস্তেগফার এর ফজিলত এবং ৫টি ইস্তেগফারের দোয়া ও সর্বশ্রেষ্ট ইস্তেগফার জেনে নেওয়ার চেষ্টা করি।
🔲ইস্তেগফার শব্দের অর্থ ক্ষমা চাওয়া। আর তাওবা হলো আল্লাহর পথে ফিরে আসা। ২ টি শব্দের অর্থ প্রায় কাছাকাছি।
ইস্তেগফারের ফজিলত ও ইস্তেগফার সম্পর্কে
💠আল্লাহর নির্দেশঃ
ইস্তিগফার সম্বন্ধে কোরআনে আছে, ‘তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো, নিশ্চয়ই তিনি মহাক্ষমাশীল।’
(সুরা-৭১ নূহ, আয়াত: ১০)
💠 ‘অতঃপর তোমার রবের প্রশংসাসহ পবিত্রতা বর্ণনা করো এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো।’
(সুরা-১১০ নাসর, আয়াত: ৩)
💠‘আর আল্লাহ তাআলা আজাব দেবেন না তাদের, আপনি তাদের মাঝে থাকা অবস্থায়; আর আল্লাহ তাদের আজাব দেবেন না, যখন তারা ইস্তিগফার করে।’
(সুরা-৮ আনফাল, আয়াত: ৩৩)
🔲তওবাঃ
তওবা অর্থ হলো ফিরে আসা। মানুষ যখন ভুল পথে যায় বা বিপথগামী হয়, তখন সেখান থেকে সঠিক পথে বা ভালো পথে ফিরে আসাকে তওবা বলা হয়।
তওবার পারিভাষিক অর্থ হলো লজ্জিত হওয়া। অর্থাৎ স্বীয় কৃতকর্মে লজ্জিত হয়ে সঠিক পথে ফিরে আসা। তওবার জন্য করণীয় হলো, স্বীয় কৃতকর্মের প্রতি লজ্জিত ও অনুতপ্ত হওয়া, সেই অপরাধ আর না করার দৃঢ় প্রত্যয় ও সংকল্প গ্রহণ করা এবং নেক আমলের প্রতি বেশিমাত্রায় মনোযোগী হওয়া।
💠তওবা সম্পর্কে কোরআনে রয়েছে,
‘হে ইমানদারেরা, তোমরা আল্লাহর কাছে খাঁটি তওবা করো, আশা করা যায় তোমাদের রব তোমাদের পাপসমূহ মোচন করবেন এবং তোমাদের এমন জান্নাতসমূহে প্রবেশ করাবেন, যার তলদেশে ঝরনাসমূহ প্রবহমান।’
(সুরা-৬৬ তাহরিম, আয়াত: ৮)
💠'নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তওবাকারীদের ও পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালোবাসেন।’
(সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ২২২)
💠রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘হে মানব সকল! তোমরা আল্লাহর দিকে ফিরে আসো, নিশ্চয় আমি প্রতিদিন ১০০ বার তওবা করি।’ (মুসলিম)
🔲কিভাবে ইস্তেগফার করবেন?
ইস্তেগফার করার বা ক্ষমা চাওয়ার দোয়া সমূহ।
সব চেয়ে ছোট ইস্তেগফার হলো :
💠*দোয়া-১:*
أَستَغْفِرُ اللهَ
উচ্চারণঃ আস্তাগফিরুল্লা-হ।
অনুবাদঃ আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
প্রতি ওয়াক্তের ফরয সালাতে সালাম ফিরানোর পর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এই দোয়া ৩ বার পড়তেন। [মিশকাত-৯৬১]
এছাড়াও সারাক্ষণ টয়লেট বাথরুম ছাড়া এই ইস্তেগফার টি পড়ে জিহবা ভিজিয়ে রাখুন এর ফজিলত অনেক বেশি।
💠*দোয়া-২:*
মূল আরবীঃ أَسْتَغْفِرُ اللهَ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ
উচ্চারণঃ আস্তাগফিরুল্লা-হা ওয়া আতূবু ইলাইহি।
অনুবাদঃ আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি ও তাঁর দিকে ফিরে আসছি।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) প্রতিদিন ৭০ বারের অধিক তাওবা ও ইসতিগফার করতেন। [বুখারী-৬৩০৭]
💠 *দোয়া-৩:*
মূল আরবীঃ أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّومُ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ
উচ্চারণঃ আস্তাগফিরুল্লা-হাল্লাযী লা- ইলা-হা ইল্লা- হুওয়াল হাইয়্যুল কইয়্যূম ওয়া আতূবু ইলায়হি।
🔲অনুবাদঃ আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, তিনি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মা‘বূদ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী এবং তাঁর কাছে তাওবাহ্ করি।
এই দোয়া পড়লে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিবেন-যদিও সে যুদ্ধক্ষেত্র হতে পলায়নকারী হয়। [আবু দাউদ-১৫১৭, তিরমিযী-৩৫৭৭, মিশকাত-২৩৫৩]
💠*দোয়া-৪:*
মূল আরবীঃ رَبِّ اغْفِرْ لِيْ وَتُبْ عَلَيَّ إِنَّكَ (أنْتَ) التَّوَّابُ الرَّحِيْمُ / الغَفُوْرُ
🔘উচ্চারণঃ রাব্বিগ্ ফিরলী, ওয়া তুব ‘আলাইয়্যা, ইন্নাকা আনতাত তাওয়া-বুর রাহীম। দ্বিতীয় বর্ণনয় “রাহীম”-এর বদলে: ‘গাফূর’।
🔘অনুবাদঃ হে আমার প্রভু, আপনি আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমার তাওবা কবুল করুন। নিশ্চয় আপনি মহান তাওবা কবুলকারী করুণাময়। দ্বিতীয় বর্ণনায়: তাওবা কবুলকারী ও ক্ষমাকারী।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) মসজিদে বসে এক বৈঠকেই এই দোয়া ১০০ বার পড়েছেন।
[আবূ দাঊদ-১৫১৬, ইবনু মাজাহ-৩৮১৪, তিরমিযী-৩৪৩৪, মিশকাত-২৩৫৩]
💠*দোয়া-৫: (সাইয়েদুল ইস্তিগফার-বা আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাওয়ার শ্রেষ্ঠ দুআ:*
সায়্যিদুল ইস্তেগফার সব চেয়ে শ্রেষ্ট ইস্তেগফার। এবং এটি সকাল সন্ধ্যার জিকির।
🔘মূল আরবীঃ اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা আনতা রব্বী লা-ইলাহা ইল্লা আনতা খালাক্কতানী ওয়া আনা আ'বদুকা ওয়া আনা আ'লা আহ্দিকা ওয়া ও’য়াদিকা মাসতাত’তু আ'উযুবিকা মিন শার্রি মা ছা’নাতু আবূউলাকা বিনি'মাতিকা আ'লাইয়্যা ওয়া আবূউলাকা বিযানবী ফাগ্ফির্লী ফাইন্নাহু লা-ইয়াগফিরুয্যুনূবা ইল্লা আনতা
অনুবাদঃ হে আল্লাহ তুমিই আমার প্রতিপালক। তুমি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমারই গোলাম। আমি যথাসাধ্য তোমার সঙ্গে প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকারের উপর আছি। আমি আমার সব কৃতকর্মের কুফল থেকে তোমার কাছে পানাহ চাচ্ছি। তুমি আমার প্রতি তোমার যে নিয়ামত দিয়েছ তা স্বীকার করছি। আর আমার কৃত গুনাহের কথাও স্বীকার করছি। তুমি আমাকে মাফ করে দাও। কারন তুমি ছাড়া কেউ গুনাহ ক্ষমা করতে পারবে না।
এই দোয়া সকালে পড়ে রাতের আগে মারা গেলে অথবা রাতে পড়ে সকালের আগে মারা গেলে সে জান্নাতে যাবে। [বুখারী-৬৩০৬]
এই দোয়াগুলো পড়ার মাধ্যমে আমরা ইস্তেগফার করার চেষ্টা করবো, ইনশাআল্লাহ! তবে সব চেয়ে উত্তম হলো সায়্যিদুল ইস্তেগফার।
মহান আল্লাহ্ আমাদের সবাইকে বেশি বেশি তওবা ও ইস্তেগফার করার তৌফিক দান করুন।
জাজাকাল্লাহ খইরন।
"বিঃদ্রঃ- আরবি উচ্চারণ বাংলায় সঠিকভাবে উচ্চারিত হয় নাহ।
"তাই নিজে আরবি না জানলে উত্তমরূপে আরবি পড়তে জানে এমন একজন এর নিকট থেকে দোয়াগুলির উচ্চারণ শিখে নেওয়া আবশ্যক।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে উপরোক্ত ইস্তেগফারের দোয়া এবং আমলগুলো সঠিক ভাবে বুঝা এবং সেই অনুযায়ী আমল করার তৌফিক দান করুন, আমিন!!!
No comments:
Post a Comment